মোঃ একরামুল হক মুন্না, পঞ্চগড় প্রতিনিধি: একরামুল হক মুন্না করোনাভাইরাসের কারণে ধারাবাহিক লকডাউনে ক্ষতিগ্রস্ত পঞ্চগড়ের টমেটো চাষিদের পাশে দাঁড়িয়েছে জেলা পুলিশ। জেলার কৃষি বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিয়ে পুলিশ সুপার উদ্যোগ নিয়ে শরীয়তপুর থেকে ৩৮ জন বেপারিকে পঞ্চগড় এনেছেন। তাদের বর্তমানে শহরের একটি আবাসিক হোটেলে কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। কোয়ারেন্টিনের মেয়াদ শেষ হলে বেপারিরা কৃষকের কাছ থেকে টমেটো কেনা শুরু করবেন।
তারপর সেই টমেটো দেশের বিভিন্ন জায়গায় সরবরাহ করা হবে। জেলার টমেটো চাষিরা বলছেন, ক্ষেতে টমেটো পেকে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে টমেটো বিক্রি করতে পারলে ক্ষয়-ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে নেওয়া যাবে। তা না হলে বিশাল ক্ষতির মুখে পড়বেন তারা। পঞ্চগড়ের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ইউসুফ আলী বরেন্দ্র নিউজ কে জানান, সম্প্রতি তিনি টমেটো চাষিদের দুরবস্থার কথা জানতে পেরে বিভিন্ন এলাকা সরেজমিন পরিদর্শন করেন। পরে জেলার কৃষি বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে পরামর্শ করে বেপারিদের আনার উদ্যোগ নেন। শরীয়তপুর জেলার পুলিশ সুপারসহ অন্যান্য জেলা পুলিশের সঙ্গে কথা বলে বেপারিদের মাইক্রোবাসে করে পঞ্চগড়ে আনার ব্যবস্থা করা হয়। এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘বেপারিদের কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। কোয়ারেন্টিন শেষ হলে তারা টমেটো কিনতে পারবেন।’ ঢাকা-চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জেলায় টমেটো নিয়ে যেতে যেন কোনও সমস্যা না হয় সে বিষয়টিও তদারকি করা হবে বলে জানান তিনি।
জেলার কৃষি কর্মকর্তারা বরেন্দ্র নিউজ কে বলছেন, পঞ্চগড় জেলায় মোট ৯৩০ হেক্টর জমিতে টমেটো চাষ হয়েছে। সদর উপজেলা ছাড়াও বরোদা, আটোয়ারী ও দেবীগঞ্জ উপজেলাতেও কিছু কিছু চাষি টমেটো চাষ করেছেন। এখানকার চাষিরা কেউ অন্যের জমি বর্গা নিয়ে, কেউ বিভিন্ন এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে টমেটো চাষ করেছেন। এই টমেটো সাধারণত ঢাকা-চট্টগ্রামসহ দক্ষিণাঞ্চলে যায়। কিন্তু এবার লকডাউনের কারণে বেপারিরা প্রথমদিকে আসতে পারেননি। জেলার পুলিশ সুপার উদ্যোগ নিয়ে তাদের আনার ব্যবস্থা করেছেন। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক মো. আবু হানিফ বরেন্দ্র নিউজ কে জানান, যে ব্যবস্থা করা হয়েছে তাতে টমেটো চাষিরা কিছুটা ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে পারবেন বলে তারা আশা করছেন। সদর উপজেলার হাফিজাবাদ ইউনিয়নের মারুপাড়া এলাকার টমেটো চাষি আলামিন জানান, তিনি এক একর জমিতে এক লাখ দশ হাজার টাকা খরচ করে টমেটো চাষ করেছেন। ব্র্যাক থেকে ঋণ নিয়ে টমেটো চাষে বিনিয়োগ করেছিলেন। কিন্তু এখন তার পথে বসার মতো অবস্থা।
ক্ষেতে টমেটো পেকে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। দ্রুত টমেটো বিক্রি করতে পারলে হয়তো কিছু টাকা উঠে আসতো।মনোহরদিঘী এলাকার আরেক চাষি খালেক জানান, তারা দুই ভাই মিলে ২৫ বিঘা জমিতে টমেটো চাষ করেছেন। ক্ষেতের ষাট শতাংশ টমেটো পেকে গেছে। পুলিশ সুপার উদ্যোগ নিয়ে বেপারিদের আনার ব্যবস্থা করেছেন। কিন্তু তারা কোয়ারেন্টিনে থাকার কারণে এখনও কেনাকাটা শুরু করেননি। দ্রুত কেনাকাটা শুরু করলে কিছু ক্ষতি উঠে আসতে পারে। পঞ্চগড়ে কোয়ারেন্টিনে থাকা শরীয়তপুরের বেপারি দাদন হাওলাদার জানান, তারা গত ১৮ ও ১৯ এপ্রিল দুই দফায় ৩৮ জন বেপারি পঞ্চগড়ে এসেছেন। পঞ্চগড়ের এসপির সহায়তায় কারণে আসার পথে কোনও সমস্যা হয়নি।
তাদের শহরের সেন্ট্রাল গেস্ট হাউজ নামে একটি হোটেলে রাখা হয়েছে। এখনও তারা টমেটো কেনা শুরু করতে পারেননি। টমেটো কেনার পর এখানে ১০-১৫ দিন শেডের নিচে রাখতে হয়। তারপর ট্রাকে করে ঢাকার কারওয়ান বাজার, যাত্রাবাড়ী, মিরপুর, চট্টগ্রাম, লাকসাম, ফেনী, কুমিল্লা, নোয়াখালীতে পাঠানো হবে। তিনি বলেন, ‘এখানে বেপারিদেরও বিনিয়োগ আছে। প্রত্যেকের বড় বড় শেড ভাড়া নেওয়া আছে। চাষিদের কাছ থেকে সময়মতো টমেটো কিনতে না পারলে চাষিদের যেমন লোকসান হবে, তেমনি বেপারিদেরও হবে।’ কোয়ারেন্টিনে থাকা আরেক বেপারি খবির দেওয়ান বলেন, ‘এখানে খাওয়ার একটু কষ্ট হচ্ছে। তবু যদি টমেটো কেনাবেচা করতে পারি তাহলে আমাদেরও কিছু লাভ হবে, কৃষক-শ্রমিকদেরও লাভ হবে।
আর ঢাকার আড়তে পাঠানোর পর বোঝা যাবে, টমেটোর দাম কেমন উঠবে।’ পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ইউসুফ আলী বলেন, ‘টমেটো যাতে নষ্ট না হয় সেজন্য প্রয়োজনে বেপারিদের নিজ নিজ শেডে কোয়ারেন্টিনে রেখে নিরাপদে কেনাকাটার ব্যবস্থা করা হবে।’ দুধের খামারিদের পাশেও পুলিশ পঞ্চগড়ের ৭৬টি দুধের খামারের খামারিদের পাশেও দাঁড়িয়েছে জেলা পুলিশ। পুলিশ সুপার বরেন্দ্র নিউজ কে বলেন, ‘আগে খামারিদের কাছ থেকে ব্র্যাক দুধ কিনতো।
লকডাউনের কারণে তারা অল্প পরিমাণে দুধ কিনছে। এতে খামারিরা বিপাকে পড়েছে। এজন্য জেলার সব ইউনিয়নের গ্রামে গ্রামে নিরাপদ দূরুত্ব বজায় রেখে সকাল ৯টা থেকে ১১টা এবং বিকাল ৩টা থেকে ৫টা পর্যন্ত দুধের হাট বসানোর পরিকল্পনা করেছি। এতে রমজান মাসে সাধারণ ক্রেতারাও দুধ কিনতে পারবেন। এছাড়া সরাসরি খামারিদের কাছ থেকে দুধ কিনছে জেলা পুলিশ। একই সঙ্গে কৃষকদের কাছ থেকে সবজিও কেনা হচ্ছে। এতে কৃষকরা কিছুটা হলেও লাভবান হবেন।
Leave a Reply